বিস্তারিত আরো পড়ুন

গানের লাভ-ক্ষতির ভাগিদার গীতিকার-সুরকার-শিল্পী সকলেরই হওয়া উচিত

ব্লগ  |  মিডিয়া  |  ফাহিম ফয়সাল

২০২২-১১-২৪ ১০:০৭

গানের লাভ-ক্ষতির ভাগিদার গীতিকার-সুরকার-শিল্পী সকলেরই হওয়া উচিত

ফাহিম ফয়সালঃ একটি গান নির্মাণের জন্য গীতিকার, সুরকার এবং সঙ্গীতশিল্পী একে অপরের পরিপূরক। এই তিন জনের একজনকেও বাদ দিলে গান হবেনা। সুতরাং এই তিনজনের মাঝে থাকা চাই নিবিড় সম্পর্ক। তবেই না ভালো একটি মৌলিক গান নির্মাণ হতে পারে। কিন্তু দীর্ঘদিন যাবত সঙ্গীতাঙ্গণে গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীতশিল্পীদের মাঝে মেধাস্বত্বের বিষয়ে মতানৈক্য দেখা যায় এবং শুরু হয় দূরত্ব। যা অত্যন্ত কষ্টদায়ক একটি ব্যাপার। এবং দাবি উঠে একজন সঙ্গীতশিল্পী গান (অডিও, ভিডিও, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, টেলিভিশন, রেডিও ইত্যাদি) থেকে যে আয় করবেন তার একটি অংশ সংশ্লিষ্ট গানের গীতিকার ও সুরকারকে দেয়ার।

সম্প্রতি দাবিটি আবারও উঠেছে যে, একজন সঙ্গীতশিল্পী (অডিও, ভিডিও, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, টেলিভিশন, রেডিও ইত্যাদি) গান গেয়ে যতো আয় করবেন তার অংশ যেন মেধাস্বত্বের ভিত্তিতে গীতিকার এবং সুরকারকেও দেওয়া হয়। সময়ের আলোকে বিষয়টি অবশ্যই যৌক্তিক। তবে এই বিষয়টির সাথে আরো কিছু বিষয়েরও সমাধান হওয়া উচিত বলে ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি।

ব্যক্তিগতভাবে একজন সঙ্গীতশিল্পী যখন একটি গান নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করেন তখন তাকে মূলত '৩টি ধাপে অর্থ ব্যয়' করতে হয়। ধাপগুলো হচ্ছে- 
১. গীতিকারের সম্মানী, 
২. সুরকারের সম্মানী, 
৩. সঙ্গীতপরিচালক/ সঙ্গীতায়োজকের সম্মানী। 

এই ৩টি ধাপের 'অর্থ ব্যয়' আবার '৩ ধরনের' হয়ে থাকে। 
১. উচ্চব্যয় (যা সবার সাধ্যে থাকেনা), 
২. মাঝারি ব্যয় (কিছু কিছু মানুষের সাধ্যে থাকে), 
৩. স্বাভাবিক ব্যয় (যা অনেকেরই সাধ্যে থাকে)। এবং এগুলোর কোন সঠিক মাপকাঠি নেই। এই ৩টি ধাপ অতিক্রমের পরই গানটি প্রকাশিত হয়। এরপর গানটি জনপ্রিয়তা পায় অথবা পায়না। যাকে আমরা বলি 'হিট' অথবা 'ফ্লপ' হওয়া। যখনই গানটি 'হিট' হয়, তখনই ঐ গানের মেধাস্বত্বের সাথে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে (গীতিকার, সুরকার) অনেকেই বলা শুরু করেন, তাদেরকে সম্মানী দেয়ার ক্ষেত্রে ঠকানো হয়েছে, মেধাস্বত্বের ভিত্তিতে উনাদেরকেও লাভের ভাগিদার করা হোক। আর যদি গানটি 'ফ্লপ' হয় তখন আর এই দাবি কখনোই উঠেনা। মানে লাভের ভাগিদার সবার (গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীতশিল্পী) আর ক্ষতির ভাগিদার একমাত্র সঙ্গীতশিল্পীর। সবার কাছেই প্রশ্ন হচ্ছে, এটা ঠিক কতটা যৌক্তিক? গীতিকার কিংবা সুরকার গানটি লিখে বা সুর করেই তার কাজ শেষ করলেও সঙ্গীতশিল্পী কিন্তু সবচেয়ে বেশি কষ্ট করেন গানটি নিয়ে। দিন রাত পরিশ্রম করে চেষ্টা করেন গানটি শ্রোতাদের কানে কানে পৌঁছে দিতে।

এবার আমার প্রশ্ন হচ্ছে- গান 'হিট' হলে যদি লাভের ভাগিদার ঐ গানের মেধাস্বত্বের সাথে সংশ্লিষ্টরা (গীতিকার, সুরকার) হতে চান, তবে গান 'ফ্লপ' হলে ক্ষতির ভাগিদারও উনাদের হওয়া উচিত নয় কি? অথচ সঙ্গীতশিল্পী কিন্তু গান নির্মাণের প্রক্রিয়ার শুরুতেই গান 'হিট হবে' নাকি 'ফ্লপ হবে' সে চিন্তা না করেই 'অর্থ ব্যয়' (উপরেল্লেখিত ৩টি ধাপে) করে ফেলেন। গান হিট কিংবা ফ্লপ যাই হোক না কেন, 'প্রাথমিক ঝুঁকি' কিন্তু সঙ্গীতশিল্পী নিজেই নেন। গীতিকার, সুরকাররা সবসময় সম্মানী নিয়ে গান লিখেন ও সুর করেন। তারা কিন্তু তাদের সম্মানী ঠিকই পেয়ে যাচ্ছেন। গান 'হিট' হোক কিংবা 'ফ্লপ' হোক তারা (গীতিকার, সুরকার) সবসময় আর্থিকভাবে 'সেইভ জোন' এ থাকেন। এদিকে সঙ্গীতশিল্পী কিন্তু আজীবনই অর্থ বিনিয়োগ করে 'ডেঞ্জার জোন' এ (ঝুঁকিতেই) থেকে যাচ্ছেন। কারণ, সব গানতো আর 'হিট' হয় না। সুতরাং, সবার (গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীতশিল্পী) কল্যাণের কথা চিন্তা করলে আমাদেরকে অবশ্যই এই প্রক্রিয়াটি সংশোধন করে নতুন করে সাজানো উচিত। 

এই ক্ষেত্রে আমার ব্যক্তিগত প্রস্তাব হচ্ছে-
১. এখন থেকে কোন সঙ্গীতশিল্পী নতুন একটি গান নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু করলে গানের মেধাস্বত্বের সাথে সংশ্লিষ্টরা (গীতিকার, সুরকার) সেই সঙ্গীতশিল্পী থেকে কোন প্রকারের সম্মানী নেবেন না। 
২. গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীতশিল্পীর (এক বা একাধিক সঙ্গীতশিল্পী হতে পারে) মাঝে আজীবনের জন্য কপিরাইট আইনের ভিত্তিতে 'মেধাস্বত্বের একটি চুক্তি' সম্পাদিত হবে যে, এই গানটি সংশ্লিষ্ট সঙ্গীতশিল্পীর (এক বা একাধিক সঙ্গীতশিল্পী হতে পারে) দ্বারা যতো (অডিও, ভিডিও, অনলাইন প্ল্যাটফর্ম, টেলিভিশন, রেডিও ইত্যাদি) আয় হবে সে আয়ের অংশ মেধাস্বত্বের ভিত্তিতে গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীতশিল্পী আজীবন পেয়ে যাবেন। 
৩. যেহেতু মেধাস্বত্বের মধ্যে সঙ্গীতপরিচালক/যারা সঙ্গীতায়োজন করেন তারা পড়েন না, আর উনারা এককালীন সম্মানী নিয়ে গানটির সংগীতায়োজন করেন সেহেতু উনারা এই প্রক্রিয়ায় পড়বেন না। কারণ, একটি গানের সংগীতায়োজন আবার নতুন করেও হতে পারে। কিন্তু কথা ও সুর একই থাকে।
৪. একজন কণ্ঠশিল্পীর মাধ্যমেই শ্রোতারা গানটি শুনতে পান এবং গানের প্রচার ও প্রসারে তিনি সবচেয়ে বেশি পরিশ্রম করেন তাই কণ্ঠশিল্পীকেই শ্রোতারা সর্বদা চেনেন ও মনে রাখেন। এদিকে নেপথ্যে থাকায় গীতিকার ও সুরকারকে শ্রোতারা চেনেন না বা কম চেনেন সেহেতু গানটি পরিবেশনের আগে সঙ্গীতশিল্পী অবশ্যই গানের গীতিকার ও সুরকারের নাম (ক্রেডিট) সম্মানের সহিত প্রকাশ করবেন/বলবেন। আর এমনটাইতো হওয়া উচিত। 
৫. গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীতশিল্পী এদের সকলের মেধা এবং স্বার্থ বিবেচনা করে এই বিষয়গুলো বাস্তবায়নের জন্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন করার সময় এখনই। পাশাপাশি মেধাস্বত্বের এই বিষয়গুলো সমাধানের জন্য গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীতশিল্পীদের সকলেরই যার যার অবস্থান থেকে ছাড় দিয়ে ঐক্যমত হওয়া প্রয়োজন। তা না হলে আজীবন মিউজিক ইন্ডাস্ট্রির এই সমস্যাগুলো থেকেই যাবে।

কপিরাইট একটি জটিল বিষয়। তাই এর বাইরেও কপিরাইট সংক্রান্ত অনেক বিষয় আছে। সেগুলোর পরামর্শও সহযোগিতা চাইলে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। 

আমার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (www.fahimfaisalofficial.comকপিরাইট সংক্রান্ত নানা আর্টিক্যাল প্রকাশ করি। সময় পেলে পড়বেন। কোন পরামর্শ প্রয়োজন হলে এই মাধ্যমে যোগাযোগ করবেন https://insightcommunication.net/online-consultation/  

আশাকরি আপনাদেরকে সুপরামর্শ দিতে পারবো ইনশাআল্লাহ। 

সবাইকে ভালোবাসা। 

©️ফাহিম ফয়সাল
সংগীতশিল্পী, সংগীতপরিচালক, মাল্টিমিডিয়া স্পেশালিস্ট, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, আইটি প্রফেশনাল, কপিরাইট-ট্রেডমার্ক গবেষক-বিশ্লেষক-পরামর্শক।  
www.fahimfaisalofficial.com